মোবাইল ডিভাইসগুলো দিনকেদিন আরও বেশি আকর্ষণীয় এবং কার্যক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে উঠছে। চিন্তা করে দেখুন এই ডিভাইসগুলো কিন্তু আর আগের মত ফোন করা আর মেসেজ দেওয়ার মত টুকিটাকি কাজে ব্যবহার হয় না, বরং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে জীবনকে আরও অনেক সহজ করে তুলছে। তাই এটা ঠিক করা একটু কঠিন হতে পারে যে কোন স্মার্টফোনটি আপনার জন্য একদম খাপে-খাপ! আমাদের আজকের পোস্টটি আপনার স্মার্টফোন বাছাই করার সেই কাজটিকে সহজ করার জন্যই লেখা হয়েছে।
তাহলে শুরু করছি...
কথা আর না বাড়িয়ে চলুন এবার দেখে নিই স্মার্টফোন কেনার সময় কোন ১১টি জিনিস বিবেচনা করা খুবই জরুরি।
স্মার্টফোনের বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী আপনি যদি Imo, Facebook, Whatsapp, Instragram ইত্যাদি সোশাল এপ চালিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন, তবে ৪,০০০-৫,০০০ টাকার মধ্যেই (এমনকি এর নিচেও) আপনার স্মার্টফোন পেয়ে যাবেন। যদি স্মার্টফোনে একটু গেমের স্বাদ নিতে চান, তবে ১০,০০০-১২,০০০ টাকার মধ্যে পাবেন মোটামুটি গেমিং স্মার্টফোন। যদিও বিশেষভাবে গেমিং এর জন্য স্মার্টফোন বাজারে পাওয়া যায় যেগুলোর দাম অনেক বেশি। তবে আপনি যদি সেরকম স্মার্টফোন গেমার না হন তাহলে ১০,০০০-১২,০০০ এর মধ্যে স্মার্টফোন কিনে আপনি ঠকবেন না আশা করি। আর Clash Royale, Clash Of Clans কিংবা Temple Run এর মত গেম খেলতে এত দামী নয়, ৪,০০০-৪,৫০০ টাকার মধ্যেই ভালো ফোন পাবেন। তবে আপনার বাজেট যদি এখানে উল্লেখ করা পরিমাণগুলো থেকে আরও বেশি হয়, তবে ডিজাইন ও পারফর্মেন্সের দিক থেকে সেরাটাই আপনি পাবেন আশা করি।
তবে এটা মনে রাখা দরকার যে স্মার্টফোনের ডিজাইন কিন্তু তার ফাংশনালিটিকে অনেকটাই প্রভাবিত করে। যেমন: মেটাল বডিওয়ালা ফোন দেখতে স্টাইলিশ এবং ট্রেন্ডি হলেও কিছু ক্ষেত্রে সেসব ফোনে রিমোভেবল ব্যাটারি কিংবা মেমরি কার্ড ব্যবহারের সুযোগ থাকে না। তাই স্মার্টফোন কেনার আগে আপনার চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন ও ফাংশনালিটির কম্বিনেশনে সেরা স্মার্টফোনটি বাছাই করুন।
ডিসপ্লের ক্ষেত্রে প্রধান দুই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয়: LCD এবং AMOLED। এই দুই ধরনের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মুল পার্থক্য ধরা পরে এদের লাইট প্রজেকশনের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে। LCD ডিসপ্লে সাধারণত উজ্জ্বল হয়ে থাকে এবং সূর্যের আলোতেও ফোনের স্ক্রিনে প্রদর্শিত ছবি ভালো দেখা যায়। অন্যদিকে, AMOLED ডিসপ্লেতে থাকে অনেক শার্প কন্ট্রাস্ট এবং স্যাচুরেটেড কালার যা ঝকঝকে ও বাস্তবধর্মী ছবি প্রদর্শনের নিশ্চয়তা দেয়। এদের মধ্যে আরও কিছু পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে, যদিও ডিসপ্লে প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত উন্নতির ফলে এই দুই ধরনের প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য ক্রমেই কমে আসছে।
তেমনিভাবে, অনেক সময় ৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ সমৃদ্ধ স্মার্টফোন কেনার পর দেখা গেল এর ৩-৩.৫ জিবিই অপারেটিং সিস্টেম এবং সিস্টেম এপস দখল করে আছে। বাকি ৪.৫-৫ জিবি স্টোরেজ হয়ত আপনার চাহিদা পূরণে সক্ষম নাও হতে পারে। কারণ বর্তমানে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তাদের পার্সোনাল কম্পিউটারের চেয়ে স্মার্টফোনে বেশি এপ ব্যবহার করে থাকেন। তাই ফোন কেনার সময় র্যাম ও ইন্টারনাল স্টোরেজ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেবেন। প্রয়োজনে ইন্টারনেটে সংশ্লিষ্ট স্মার্টফোনের ওয়েবসাইটে সেই ফোন সম্পর্কে তথ্য নিতে পারেন।
সাধারণত বড় স্ক্রিনের ফোন চার্জ বেশি ব্যবহার করে, আবার লেটেস্ট প্রযুক্তির প্রসেসর চার্জ কম ব্যবহার করে এবং ব্যাটারি লাইফ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ফোনের অধিক ব্যবহার এবং কিছুক্ষণ পর পর চার্জ দেওয়ার ফলে ব্যাটারি লাইফ কমে যায়। কিছু ফোনে আবার রয়েছে ডজ মোড এবং কুইক চার্জিং টেকনোলজি। সবচেয়ে ভালো হয় পছন্দের ডিভাইসটির হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সাথে ব্যাটারি কনজিউমের ব্যাপারটি মাথায় রাখার পাশাপাশি ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইটে ফোনগুলোর বেঞ্চমার্ক ও রিভিউ দেখা। তবে বর্তমানে উত্তম হবে অন্তত ৩০০০ mAh ক্ষমতার ব্যাটারি সমৃদ্ধ ফোন পছন্দ করা।
একটা জিনিস মনে রাখা দরকার, ক্যামেরার MP বা MegaPixel-ই কিন্তু ক্যামেরার সব নয়। মেগাপিক্সেল শুধু নির্দেশ করে আপনি কত বড় (কত রেজুলেশনের) ছবি তুলতে পারবেন। মেগাপিক্সের বেশি হওয়ার পাশাপাশি পিক্সেল কোয়ালিটিও ভালো হওয়া প্রয়োজন। অনেক সময়ই দেখা যায় একই মেগাপিক্সেল হওয়া সত্ত্বেও ব্র্যান্ডভেদে ছবির কোয়ালিটি বিভিন্ন হয়। মেগাপিক্সের পাশাপাশি Aperture, Optic Stabilization, Auto Focus, Camera Sensors, Lens, Special Effects ইত্যাদি জিনিসও যাচাই করা খুব জরুরি। সবচেয়ে ভালো হয় অনলাইনের ফোনটির ক্যামেরার রিভিউ দেখার পাশাপাশি ফোনের দোকানে নিজেই ফোনটি হাতে নিয়ে ক্যামেরা অন করে যাচাই করা।
কিন্তু শুধু বাহ্যিক এই ফিচারগুলোই নয়, পাশাপাশি সফটওয়্যারের দিকটিও বিবেচনা করুন। যেমন: স্যামসাংকে এর Buggy সফটওয়্যারের জন্য অনেক মানুষই অপছন্দ করে থাকেন, কিন্তু হার্ডওয়্যারের কোয়ালিটি, সিকিউরিটি ও স্থায়িত্যের দিক থেকে স্যামসাং অনেক এগিয়ে। এখন আপনি যদি স্মার্টফোন কিনে রুট করে সহজেই স্মার্টফোনের ক্ষমতা বাড়াতে চান (অবশ্যই সিকিউরিটিকে উপেক্ষা করেই), তবে স্যামসাং বা এই টাইপের স্মার্টফোন না কেনাই ভালো। আবার এসব ঝুটঝামেলায় জড়াতে না চাইলে আসল এন্ড্রয়েড স্টক রম সমৃদ্ধ স্মার্টফোন (যেমন: নকিয়া, সিম্ফোনি) ব্যবহার করতে পারেন।
এসবের পাশাপাশি দেখুন আরও কি কি স্পেশাল ফিচার রয়েছে। যেমন: প্যারেন্টাল লক, গেস্ট মোড ইত্যাদি। আবার আপনি যদি অধিকাংশ সময় স্মার্টফোনে বই পড়তে চান, তবে দেখুন তাতে ডিস্প্লের hue এবং ব্রাইটনেস সহজে এডজাস্ট করার সিস্টেম আছে কিনা। পাশাপাশি দেখুন তাতে সূর্যের আলোতে সহজে পড়ার ব্যবস্থা, Night Mode এবং Eye Protection এর ব্যবস্থা আছে কিনা। মোটকথা, স্মার্টফোনের প্যাকেটের গায়ে যা লেখা আছে তা দেখেই আশ্বস্ত না হয়ে বরং ফোনের দোকানে ফোন কেনার আগে ফোনের ডিস্প্লেটি অন করে দেখে নিন স্মার্টফোনটি আপনার চাহিদা ঠিকঠাক পূরণ করবে কিনা।
এবার বলুন স্মার্টফোন কেনার সময় আপনি কি কি বিষয় বিবেচনা করেন। এমনও কি কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা যোগ্য যা এখানে উল্লেখ করা হয় নি? থাকলে এখুনি কমেন্ট বক্সে জানান। :-)
Search Tags:
স্মার্টফোন কেনার আগে যা করবেন, স্মার্টফোন কেনার আগে যা করা উচিত, স্মার্টফোন কেনার আগে, স্মার্টফোন কেনার আগে 11 টি বিষয়, স্মার্টফোন কেনার আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, স্মার্ট ফোন.
তাহলে শুরু করছি...
স্মার্টফোন কেনার আগে যে ১১ টি বিষয় বিবেচনা করবেন
কথা আর না বাড়িয়ে চলুন এবার দেখে নিই স্মার্টফোন কেনার সময় কোন ১১টি জিনিস বিবেচনা করা খুবই জরুরি।
১। প্রয়োজন অনুযায়ী পছন্দ
স্মার্টফোন পছন্দ করার আগে আপনার উচিত আপনার প্রয়োজনকে বিবেচনায় আনা। বর্তমানের স্মার্টফোনগুলোকে ছোটখাট কম্পিউটার বললেও বোধ হয় ভুল হবে না। কারণ দৈনন্দিন জীবনে ছোটখাট সমস্যা যা কম্পিউটার ছাড়া ভাবাই যেত না, এখন সেগুলো স্মার্টফোনের মাধ্যমে সহজেই করা সম্ভব হচ্ছে। সেটা হতে পারে ইমোতে ভিডিও কলিং, অফিসের জন্য প্রেজেন্টেশন তৈরি কিংবা একলা ঘরে বসে Clash Royale খেলা! ছোটখাট ফটো এডিটিং এর জন্যও এখন আর কেউ ফটোশপ ব্যবহার করে না। কিন্তু আপনি হলে দৈনন্দিন জীবনে স্মার্টফোনটিকে ব্যবহার করবেন?স্মার্টফোনের বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী আপনি যদি Imo, Facebook, Whatsapp, Instragram ইত্যাদি সোশাল এপ চালিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন, তবে ৪,০০০-৫,০০০ টাকার মধ্যেই (এমনকি এর নিচেও) আপনার স্মার্টফোন পেয়ে যাবেন। যদি স্মার্টফোনে একটু গেমের স্বাদ নিতে চান, তবে ১০,০০০-১২,০০০ টাকার মধ্যে পাবেন মোটামুটি গেমিং স্মার্টফোন। যদিও বিশেষভাবে গেমিং এর জন্য স্মার্টফোন বাজারে পাওয়া যায় যেগুলোর দাম অনেক বেশি। তবে আপনি যদি সেরকম স্মার্টফোন গেমার না হন তাহলে ১০,০০০-১২,০০০ এর মধ্যে স্মার্টফোন কিনে আপনি ঠকবেন না আশা করি। আর Clash Royale, Clash Of Clans কিংবা Temple Run এর মত গেম খেলতে এত দামী নয়, ৪,০০০-৪,৫০০ টাকার মধ্যেই ভালো ফোন পাবেন। তবে আপনার বাজেট যদি এখানে উল্লেখ করা পরিমাণগুলো থেকে আরও বেশি হয়, তবে ডিজাইন ও পারফর্মেন্সের দিক থেকে সেরাটাই আপনি পাবেন আশা করি।
২। বাজেট
এটাও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। কারণ, আপনার কাছে অনেক স্টাইলিশ স্মার্টফোন পছন্দ হলেও বাজেটের ভিতরে না থাকলে তা আপনার ভাগ্যে জুটবে না। কম বাজেটের স্মার্টফোন ক্রেতাদের জন্য এটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর হ্যাঁ, বাজেট অবশ্যই স্মার্টফোনে কি কাজ করবেন সেই চাহিদা অনুযায়ী ঠিক করবেন।৩। বিভিন্ন মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার ও তাদের অফার
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার আকর্ষণীয় দামে ভালো মানের বিভিন্ন স্মার্টফোন বিক্রি করছে। অনেক সময়ই তাতে পূর্বনির্ধারিত হারে ক্যাশব্যাক অফার থাকে, কিংবা সমমূল্যের মোবাইল রিচার্জ বা মেগাবাইট দিয়ে থাকে। তাই স্মার্টফোন কিনতে চাইলে মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারগুলোর অফার সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।৪। অপারেটিং সিস্টেম
আপনি যদি এই আর্টিকেলটি পড়া শুরু করে থাকেন, তাহলে বলা যায় যে আপনি এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম সমৃদ্ধ একটি স্মার্টফোন কিনতে যাচ্ছেন। কিন্তু এন্ড্রয়েডের রয়েছে অনেকগুলো ভার্শন। তাই স্মার্টফোন কেনার আগে এন্ড্রয়েডের বিভিন্ন ভার্শন [যেমন: Lollipop (5.x), Marshmallow (6.x) এবং Nougat (7.x)] এর মধ্যে কি কি পার্থক্য রয়েছে তা আপনার জানা দরকার। কারণ প্রত্যেকটিরই রয়েছে নিজস্ব অনন্য বৈশিষ্ট্য ও কার্যাবলি। এন্ড্রয়েডের লেটেস্ট ভার্শন হচ্ছে Oreo 8.1, কিন্তু সব ডিভাইসের জন্য এটি এখনও উন্মুক্ত নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনই এন্ড্রয়েডের আউটডেটেড ভার্শন Lollipop বা Kitkat ব্যবহারের কথা বলব না। বরং, বলব এমন একটি স্মার্টফোন কিনুন যাতে Oreo বা Nougat কিংবা অন্তত Marshmallow থাকে এবং পরবর্তীতে Nougat এবং Oreo তে আপডেট করার সুযোগ থাকে।৫। ডিজাইন ও ফাংশনালিটি
স্মার্টফোন কেনার সময় সফটওয়্যার এবং বাইরের সৌন্দর্য্য অনুযায়ী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিজস্ব পছন্দ বা চাহিদাকেই সবার উপরে স্থান দেওয়া উচিত। কিছু লোক স্মার্টফোনের ডিজাইনের ক্ষেত্রে বাইরের Rounded Shape (কোণাবিহীন আকৃতি) পছন্দ করেন। আবার কেউ হয়ত একটু Sharp Metal Edge (সাধারণত এলুমিনিয়াম বডি যাতে কিনারায় কোণা থাকে) বিশিষ্ট ফোন ভালোবাসেন। আবার কেউ হয়ত বেজেললেস (ফোনের দৈর্ঘ্য বরাবর কিছুটা চেপ্টা ধরনের) ফোনেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।তবে এটা মনে রাখা দরকার যে স্মার্টফোনের ডিজাইন কিন্তু তার ফাংশনালিটিকে অনেকটাই প্রভাবিত করে। যেমন: মেটাল বডিওয়ালা ফোন দেখতে স্টাইলিশ এবং ট্রেন্ডি হলেও কিছু ক্ষেত্রে সেসব ফোনে রিমোভেবল ব্যাটারি কিংবা মেমরি কার্ড ব্যবহারের সুযোগ থাকে না। তাই স্মার্টফোন কেনার আগে আপনার চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন ও ফাংশনালিটির কম্বিনেশনে সেরা স্মার্টফোনটি বাছাই করুন।
৬। সাইজ এবং ডিসপ্লের ধরন
যারা ফোনে খরব পড়েন কিংবা এইচডি মুভি দেখেন ও গেম খেলেন তারা অন্ততপক্ষে ৫ ইঞ্চি (আরও বড় হলে আরও ভালো) ডিসপ্লে সমৃদ্ধ স্মার্টফোন কিনবেন। তবে শুধুমাত্র অনলাইন সোশাল এক্টিভিটির জন্য ৪ থেকে ৪.৫ ইঞ্চিই যথেষ্ট।ডিসপ্লের ক্ষেত্রে প্রধান দুই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয়: LCD এবং AMOLED। এই দুই ধরনের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মুল পার্থক্য ধরা পরে এদের লাইট প্রজেকশনের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে। LCD ডিসপ্লে সাধারণত উজ্জ্বল হয়ে থাকে এবং সূর্যের আলোতেও ফোনের স্ক্রিনে প্রদর্শিত ছবি ভালো দেখা যায়। অন্যদিকে, AMOLED ডিসপ্লেতে থাকে অনেক শার্প কন্ট্রাস্ট এবং স্যাচুরেটেড কালার যা ঝকঝকে ও বাস্তবধর্মী ছবি প্রদর্শনের নিশ্চয়তা দেয়। এদের মধ্যে আরও কিছু পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে, যদিও ডিসপ্লে প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত উন্নতির ফলে এই দুই ধরনের প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য ক্রমেই কমে আসছে।
৭। প্রসেসর
প্রসেসর হচ্ছে স্মার্টফোনের কেন্দ্রীয় অংশ যার উপরে স্মার্টফোনের পারফর্মেন্স প্রায় পুরোপুরিই নির্ভরশীল। মাঝে মধ্যে আউটডেটেড কিংবা কম প্রচলিত প্রসেসর ব্যবহার করার ফলে সফটওয়্যার আপডেট বাধাগ্রস্থ হয়। বর্তমানে অধিকাংশ ফোনেই নূন্যতম কোয়াড কোর প্রসেসর থাকে। তবে পারফরমেন্সকে গুরুত্ব দিলে লেটেস্ট প্রযুক্তির 64-bit প্রসেসর সমৃদ্ধ স্মার্টফোন কেনাই ভালো। প্রসেসর ব্র্যান্ডের মধ্যে Qualcomm, Mediatek এবং Snapdragon সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং সফল।৮। র্যাম এবং ইন্টারনাল মেমরি
ডিভাইস পারফর্মেন্স ঠিক রাখতে হার্ডওয়্যার অংশে প্রসেসরের পরেই আসে র্যাম এবং ইন্টারনাল মেমরি। যেকোনো স্মার্টফোন কেনার আগে অবশ্যই এর র্যাম ও ইন্টারনাল মেমরি সম্পর্কে জেনে নেওয়া দরকার। তবে শুধু স্মার্টফোনের প্যাকেটের গায়ে লেখা অংশটুকু দেখেই আশ্বস্ত হবেন না। কারণ অনেক সময় প্যাকেটের গায়ে লেখা পরিমাণ আপনার অজান্তেই আপনার মন মত নাও হতে পারে। যেমন: আপনি ফোন কিনলেন ১ জিবি র্যামের। কিন্তু ফোন কেনার পর ভিতরে ম্যানুয়ালে লেখা যে র্যামের ৫১২ এম্বিই সিস্টেমের কাজে ব্যবহৃত হবে। তখন কিন্তু আপনি আসলে ১ জিবি নিজের মত ব্যবহার করতে পারবেন না।তেমনিভাবে, অনেক সময় ৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ সমৃদ্ধ স্মার্টফোন কেনার পর দেখা গেল এর ৩-৩.৫ জিবিই অপারেটিং সিস্টেম এবং সিস্টেম এপস দখল করে আছে। বাকি ৪.৫-৫ জিবি স্টোরেজ হয়ত আপনার চাহিদা পূরণে সক্ষম নাও হতে পারে। কারণ বর্তমানে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তাদের পার্সোনাল কম্পিউটারের চেয়ে স্মার্টফোনে বেশি এপ ব্যবহার করে থাকেন। তাই ফোন কেনার সময় র্যাম ও ইন্টারনাল স্টোরেজ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেবেন। প্রয়োজনে ইন্টারনেটে সংশ্লিষ্ট স্মার্টফোনের ওয়েবসাইটে সেই ফোন সম্পর্কে তথ্য নিতে পারেন।
৯। ব্যাটারি লাইফ
স্মার্টফোন কেনার সময় ব্যাটারি লাইফ অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। ব্যাটারির mAh বেশি মানেই যে ব্যাটারি বেশিদিন টিকবে এমনটি নয়। mAh শুধুমাত্র কতক্ষণ ফোনে চার্জ থাকতে পারে তার একটা হিসেব দিতে পারে, তাও সেক্ষেত্রে অনেক বিবেচ্য বিষয় রয়েছে।সাধারণত বড় স্ক্রিনের ফোন চার্জ বেশি ব্যবহার করে, আবার লেটেস্ট প্রযুক্তির প্রসেসর চার্জ কম ব্যবহার করে এবং ব্যাটারি লাইফ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ফোনের অধিক ব্যবহার এবং কিছুক্ষণ পর পর চার্জ দেওয়ার ফলে ব্যাটারি লাইফ কমে যায়। কিছু ফোনে আবার রয়েছে ডজ মোড এবং কুইক চার্জিং টেকনোলজি। সবচেয়ে ভালো হয় পছন্দের ডিভাইসটির হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সাথে ব্যাটারি কনজিউমের ব্যাপারটি মাথায় রাখার পাশাপাশি ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইটে ফোনগুলোর বেঞ্চমার্ক ও রিভিউ দেখা। তবে বর্তমানে উত্তম হবে অন্তত ৩০০০ mAh ক্ষমতার ব্যাটারি সমৃদ্ধ ফোন পছন্দ করা।
১০। ক্যামেরা
ক্যামেরাকে ১০ নাম্বারে রাখাতে অনেকের চোখ হয়ত চরকগাছে উঠেছে। কারণ আমাদের দেশে প্রায় অধিকাংশ মানুষই ফোন কেনার সময় ক্যামেরাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সাধারণ ব্যবহারের জন্য অত ভালো ক্যামেরার প্রয়োজন না হলেও ফোন দিয়ে শর্ট ফিল্ম, ইউটিউবিং বা মোবাইল ফটোগ্রাফি করতে চাইলে ভালো ক্যামেরার জুড়ি নেই। তবে বর্তমানে সোশাল মিডিয়াতে ফেলফি আপলোডিং এমনই ভাইরাসের মত ছড়িয়ে গেছে যে বর্তমানে ফোন কেনার সময় অনেকেই ক্যামেরাকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেন।একটা জিনিস মনে রাখা দরকার, ক্যামেরার MP বা MegaPixel-ই কিন্তু ক্যামেরার সব নয়। মেগাপিক্সেল শুধু নির্দেশ করে আপনি কত বড় (কত রেজুলেশনের) ছবি তুলতে পারবেন। মেগাপিক্সের বেশি হওয়ার পাশাপাশি পিক্সেল কোয়ালিটিও ভালো হওয়া প্রয়োজন। অনেক সময়ই দেখা যায় একই মেগাপিক্সেল হওয়া সত্ত্বেও ব্র্যান্ডভেদে ছবির কোয়ালিটি বিভিন্ন হয়। মেগাপিক্সের পাশাপাশি Aperture, Optic Stabilization, Auto Focus, Camera Sensors, Lens, Special Effects ইত্যাদি জিনিসও যাচাই করা খুব জরুরি। সবচেয়ে ভালো হয় অনলাইনের ফোনটির ক্যামেরার রিভিউ দেখার পাশাপাশি ফোনের দোকানে নিজেই ফোনটি হাতে নিয়ে ক্যামেরা অন করে যাচাই করা।
১১। সফটওয়্যার এবং বিল্ট-ইন স্পেশাল ফিচারস
আপনার ফোনে আপনি কি কি চান? ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর, হার্টরেট সেন্সর, ইউভ (UV) সেন্সর? লেটেস্ট টপ অব দা লাইন ফোন থেকে মিড-রেঞ্জের ফোনগুলোতে আপনি এগুলো পেয়ে যাবেন।কিন্তু শুধু বাহ্যিক এই ফিচারগুলোই নয়, পাশাপাশি সফটওয়্যারের দিকটিও বিবেচনা করুন। যেমন: স্যামসাংকে এর Buggy সফটওয়্যারের জন্য অনেক মানুষই অপছন্দ করে থাকেন, কিন্তু হার্ডওয়্যারের কোয়ালিটি, সিকিউরিটি ও স্থায়িত্যের দিক থেকে স্যামসাং অনেক এগিয়ে। এখন আপনি যদি স্মার্টফোন কিনে রুট করে সহজেই স্মার্টফোনের ক্ষমতা বাড়াতে চান (অবশ্যই সিকিউরিটিকে উপেক্ষা করেই), তবে স্যামসাং বা এই টাইপের স্মার্টফোন না কেনাই ভালো। আবার এসব ঝুটঝামেলায় জড়াতে না চাইলে আসল এন্ড্রয়েড স্টক রম সমৃদ্ধ স্মার্টফোন (যেমন: নকিয়া, সিম্ফোনি) ব্যবহার করতে পারেন।
এসবের পাশাপাশি দেখুন আরও কি কি স্পেশাল ফিচার রয়েছে। যেমন: প্যারেন্টাল লক, গেস্ট মোড ইত্যাদি। আবার আপনি যদি অধিকাংশ সময় স্মার্টফোনে বই পড়তে চান, তবে দেখুন তাতে ডিস্প্লের hue এবং ব্রাইটনেস সহজে এডজাস্ট করার সিস্টেম আছে কিনা। পাশাপাশি দেখুন তাতে সূর্যের আলোতে সহজে পড়ার ব্যবস্থা, Night Mode এবং Eye Protection এর ব্যবস্থা আছে কিনা। মোটকথা, স্মার্টফোনের প্যাকেটের গায়ে যা লেখা আছে তা দেখেই আশ্বস্ত না হয়ে বরং ফোনের দোকানে ফোন কেনার আগে ফোনের ডিস্প্লেটি অন করে দেখে নিন স্মার্টফোনটি আপনার চাহিদা ঠিকঠাক পূরণ করবে কিনা।
এবার বলুন স্মার্টফোন কেনার সময় আপনি কি কি বিষয় বিবেচনা করেন। এমনও কি কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা যোগ্য যা এখানে উল্লেখ করা হয় নি? থাকলে এখুনি কমেন্ট বক্সে জানান। :-)
Search Tags:
স্মার্টফোন কেনার আগে যা করবেন, স্মার্টফোন কেনার আগে যা করা উচিত, স্মার্টফোন কেনার আগে, স্মার্টফোন কেনার আগে 11 টি বিষয়, স্মার্টফোন কেনার আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, স্মার্ট ফোন.